Share on WhatsApp Share on Telegram

প্রুফ সংশোধনের নিয়মাবলী উদাহরণ সহযোগে আলোচনা | How to Proofread Professionally

লেখালেখি বা কোনো প্রকাশনার ক্ষেত্রে কোনো বিষয়কে পুরোপুরি ফাইনাল করার আগের পর্যায় হল প্রুফ সংশোধন। এই প্রুফ সংশোধনের নিয়মাবলী (How to Proofread Professionally) অনুসরণ করার মধ্য দিয়ে উক্ত প্রকাশনা বা লেখালেখির নির্ভরযোগ্যতা বৃদ্ধি করা যায়।

প্রুফ সংশোধনের নিয়মাবলী উদাহরণ সহযোগে আলোচনা | How to Proofread Professionally

প্রুফ সংশোধন হল কোনো লেখার চূড়ান্ত খসড়া পরীক্ষা করার প্রক্রিয়া, যাতে বানান, ব্যাকরণ, বিরামচিহ্ন এবং বিন্যাসের দিক থেকে সব ঠিক থাকে।

লেখালেখি এমন একটি প্রক্রিয়া যেখানে ভালো ভাব প্রকাশ এবং নিখুঁত বানান, ব্যাকরণ ও সঠিক বিন্যাস খুব গুরুত্বপূর্ণ। প্রুফ সংশোধন (Proofreading) হল সেই ধাপ, যেখানে আপনার লেখা জমা দেওয়ার বা প্রকাশের আগে তা পরীক্ষা করে সব ধরনের ভুল খুঁজে বের করা হয়। এটি শুধুমাত্র বানান বা ব্যাকরণের ভুল ঠিক করা নয়, বরং লেখার মান, সঙ্গতি ও পাঠযোগ্যতাও বৃদ্ধি করে।

পেশাদারভাবে প্রুফরিডিং করার জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ নিয়ম রয়েছে। এখানে প্রুফ সংশোধনের নিয়মাবলী উদাহরণ সহযোগে আলোচনা (How to Proofread Professionally) বিস্তারিতভাবে করা হল –

বানান যাচাই করা (Check Spelling)

লেখায় বানানের ভুল থাকলে তা লেখার মান নষ্ট করে এবং পাঠকের কাছে বিরক্তিকর মনে হয়। ফলে পাঠকের কাছে তা গ্রহণযোগ্য নাও হতে পারে। তাই প্রুফরিডিংয়ের প্রথম ধাপ হল লেখার মধ্যে সব শব্দের বানান সঠিক আছে কিনা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে যাচাই করা।

উদাহরণ: এর উদাহরণ হল –

  • ভুল বানান: অভ্যাস্য
  • সঠিক বানান: অভ্যাস

বিরামচিহ্ন সঠিক ব্যবহার (Use Correct Punctuation)

কোনো লেখার প্রুপ সংশোধনের ক্ষেত্রে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিরামচিহ্ন যেমন – কমা, ফুলস্টপ, সেমিকোলন ঠিকভাবে ব্যবহার না করলে বাক্যের অর্থ পরিবর্তিত হতে পারে।

উদাহরণ: এর উদাহরণ হল –

  • ভুল: আমি বাজারে গেলাম মা ডাকলো
  • সঠিক: আমি বাজারে গেলাম, মা ডাকলো।

ব্যাকরণ ঠিক করা (Correct Grammar)

ব্যাকরণগত ভুল পাঠকের বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে। প্রুফরিডিংয়ের সময় বিষয়, ক্রিয়া, কাল এবং সর্বনাম ঠিক আছে কিনা যাচাই করা গুরুত্বপূর্ণ। অর্থাৎ কালের নিয়ম অনুযায়ী বা ব্যাকরণ অনুযায়ী কোন লাইন বা বাক্য প্যারাগ্রাফ প্রভৃতির মধ্যে সামঞ্জস্য বজায় রাখতে হয়।

এক্ষেত্রে বাক্যের ক্রিয়াপদ এবং বিষয়ের মিল পরীক্ষা এবং সম্ভাব্য সময় (tense) এবং singular/plural মিল ঠিক আছে কিনা তা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে হয়।

উদাহরণ: এর উদাহরণ হল –

  • ভুল: সে প্রতিনিয়ত স্কুল যাই।
  • সঠিক: সে প্রতিদিন স্কুলে যায়।

অপ্রয়োজনীয় শব্দ বা পুনরাবৃত্তি বাদ দেওয়া (Remove Redundancy)

প্রুফ সংশোধনের নিয়মাবলীর মধ্যে অন্যতম হল অপ্রয়োজনীয় বা পুনরাবৃত্তি শব্দবা বাক্যের উপর গুরুত্ব প্রদান করে। কারণ একই অর্থ বারবার লেখা বা অপ্রয়োজনীয় শব্দ লেখাকে ভারী করে। অর্থাৎ বাক্য গঠনের নিয়ম অনুযায়ী কোনো শব্দ বারবার পুনরাবৃত্তি করলে পাঠকের কাছে তা গ্রহণযোগ্য হয় না। তাই বাক্যকে সংক্ষিপ্ত এবং পরিষ্কার করা ও অপ্রয়োজনীয় শব্দ চিহ্নিত করে বাদ দিতে হবে। তাই এক্ষেত্রে এই নিয়মটা মেনে চলা উচিত।

উদাহরণ: এর উদাহরণ হল –

  • ভুল: আমি নিজে নিজে নিজের কাজ করেছি।
  • সঠিক: আমি নিজের কাজ করেছি।

সংখ্যা ও তথ্য যাচাই (Check Numbers & Figures)

প্রুফ সংশোধনের নিয়মাবলীর মধ্যে অন্যতম হল লেখায় ভুল বা সংখ্যাগত ভুল। অর্থাৎ লেখায় ভুল সংখ্যা (যেমন – সাল, তারিখ) বা তথ্য থাকলে পুরো লেখার বিশ্বাসযোগ্যতা কমে যায়। তাই সব সংখ্যা, তারিখ, পরিসংখ্যান এবং ইউনিট যাচাই ও প্রয়োজন হলে মূল সূত্র বা তথ্যের উৎস যাচাই করতে হবে।

উদাহরণ: এর উদাহরণ হল –

  • ভুল: 2015 সালে ভারত স্বাধীনতা লাভ করেছে।
  • সঠিক: 1947 সালে ভারত স্বাধীনতা লাভ করেছে।

অর্থবোধকতা যাচাই (Ensure Clarity of Meaning)

বাক্যের অর্থ স্পষ্ট না হলে পাঠক বুঝতে পারবে না। প্রুফরিডিংয়ে ক্ষেত্রে লেখা সহজ, সংক্ষিপ্ত এবং সঠিকভাবে বোঝায় কিনা তা বিচার বিশ্লেষণ করতে হয়। এক্ষেত্রে জটিল বাক্যকে সরল বাক্য রূপান্তর ও প্রয়োজনে বাক্য পুনর্গঠন করা উচিত।

উদাহরণ: এর উদাহরণ হল –

  • ভুল: সে কলা খেল বই পড়িতে পড়িতে।
  • সঠিক: সে বই পড়তে পড়তে কলা খেল।

একাধিকবার পড়া (Read Multiple Times)

একবার পড়লে সব ভুল ধরতে অনেক সময় ধরা পড়ে না। তাই একাধিকবার পড়া প্রুফরিডিংয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ নিয়ম। এক্ষেত্রে

  • প্রথমবার: বানান পরীক্ষা
  • দ্বিতীয়বার: ব্যাকরণ ও বিরামচিহ্ন পরীক্ষা
  • তৃতীয়বার: অর্থ এবং সঙ্গতি যাচাই

উচ্চস্বরে পড়া (Read Aloud)

উচ্চস্বরে পড়লে বাক্যের ধারা এবং লয় বোঝা যায়, যা ভুল ধরতে সাহায্য করে। অর্থাৎ উচ্চারণগত দক্ষতা প্রুফ সংশোধনের নিয়মাবলীর মধ্যে অন্যতম।

উদাহরণ:

  • লিখে পড়া: “সে স্কুলে গেল মা ডাকল।”
  • উচ্চস্বরে পড়া: ভুলের অবস্থান সহজে বোঝা যায় এবং কমা দরকার হলে তা সহজে বোঝা যায়।

উপসংহার | Conclusion

তাই প্রুফ সংশোধন (Proofreading) হল কোনো লেখাকে নিখুঁত ও গ্রহণযোগ্য করে তোলার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। এটি কেবল বানান বা ব্যাকরণের ভুল ধরার জন্য নয়, বরং লেখার অর্থবোধকতা, সঙ্গতি, পাঠযোগ্যতা এবং পেশাদার মান নিশ্চিত করার জন্য অপরিহার্য। উপরোক্ত নিয়মাবলী যেমন – বানান যাচাই, বিরামচিহ্নের সঠিক ব্যবহার, ব্যাকরণ সংশোধন, অপ্রয়োজনীয় শব্দ বাদ দেওয়া, সংখ্যা ও তথ্য যাচাই, অর্থ পরিষ্কার রাখা, একাধিকবার পড়া এবং উচ্চস্বরে পড়া—এসব অনুসরণ করলে একটি লেখাকে অনেক বেশি প্রাঞ্জল, নির্ভুল অর্থবহ ও নির্ভরযোগ্য করে তোলে।

অতএব, শিক্ষাগত বিভিন্ন রচনা, ব্লগ পোস্ট, গবেষণা প্রবন্ধ বা যেকোনো ধরণের লেখা প্রকাশের আগে অবশ্যই প্রুফ সংশোধনের ধাপটি সম্পন্ন করা উচিত। এটি লেখকের দক্ষতা প্রকাশ করে এবং পাঠকের কাছে লেখাটিকে আরও বিশ্বাসযোগ্য করে তোলে।

তথ্যসূত্র | Sources

  • বাংলা মুদ্রণ ও প্রকাশনা – ডঃ তারকনাথ ভট্টাচার্য, ইউনাইটেড বুক এজেন্সী।
  • পাণ্ডুলিপি পঠন সহায়িকা – ড. কল্পনা হালদার, সাহিত্য লোক।
  • Einsohn, A., & Schwartz, M. (2019). The copyeditor’s handbook: A guide for book publishing and corporate communications (4th ed.). University of California Press.
  • Butcher, J., Drake, C., & Leach, M. (2016). Butcher’s copy-editing: The Cambridge handbook for editors, copy-editors and proofreaders (4th ed.). Cambridge University Press.
  • Chicago Manual of Style. (2017). The Chicago manual of style (17th ed.). University of Chicago Press.
  • Ritter, R. M. (2015). The Oxford guide to style (New Hart’s rules) (2nd ed.). Oxford University Press.
  • Luey, B. (2010). Handbook for academic authors (5th ed.). Cambridge University Press.
  • Internet sources

প্রশ্ন – প্রুফ রিডিংয়ের নিয়মাবলী কী কী?

উত্তর – প্রুফ রিডিংয়ের নিয়মাবলী হল – বানান যাচাই, বিরামচিহ্নের সঠিক ব্যবহার, ব্যাকরণ সংশোধন, অপ্রয়োজনীয় শব্দ বাদ দেওয়া, সংখ্যা ও তথ্য যাচাই, অর্থ পরিষ্কার রাখা, একাধিকবার পড়া এবং উচ্চস্বরে পড়া প্রভৃতি।

Latest Articles

Rate this post

Leave a Comment

close