বিশ্বের সমস্ত লিখিত সংবিধান গুলির মধ্যে বৃহত্তম এবং লিখিত সংবিধান হল ভারতের সংবিধান। তাই ভারতীয় সংবিধানের বৈশিষ্ট্য (Characteristics of Indian Constitution) বিভিন্ন দিক থেকে বিশেষভাবে পরিলক্ষিত হয়ে থাকে।
ভারতীয় সংবিধান সমগ্র ভারতবর্ষের কাছে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এই সংবিধানের মাধ্যমে ভারতবর্ষকে একটি সার্বভৌম, সমাজতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক ও সাধারণতন্ত্র রূপে গড়ে তোলার অঙ্গীকার করা হয়। যার মাধ্যমে সমগ্র ভারতবাসীর স্বাধীনতা ও সময় সুযোগসহ ঐক্য ও সংহতি সুনিশ্চিত করা হয়ে থাকে।
ভারতীয় সংবিধানের বৈশিষ্ট্য | Characteristics of Indian Constitution
স্বাধীন ভারতবর্ষের গণপরিষদ ১৯৪৬ সালে সংবিধান রচনার কাজ শুরু হয়। ডক্টর বি আর আম্বেদকরের নেতৃত্বে ভারতীয় সংবিধান রচনার কাজ শুরু হয়। ডক্টর রাজেন্দ্র প্রসাদ ছিলেন এই গণপরিষদের সভাপতি এবং গণপরিষদের সর্বমোট সদস্য সংখ্যা ছিল ৩৮৯ । এই গণপরিষদের দেশীয় রাজ্যগুলির প্রতিনিধিত্বের সংখ্যা ছিল ৯৩ জন।
১৯৫০ সালে ২৬ শে জানুয়ারি স্বাধীন ভারতবর্ষের সংবিধান আনুষ্ঠানিকভাবে গৃহীত এবং কার্যকরী হয়।
ভারতীয় সংবিধানের বৈশিষ্ট্য যে সমস্ত দিক থেকে বিশেষভাবে পরিলক্ষিত হয়ে থাকে, সেগুলি হল নিম্নলিখিত –
1. বৃহত্তম লিখিত সংবিধান
বিশ্বের সর্বাপেক্ষা বৃহত্তম ও লিখিত সংবিধান হলো ভারতের সংবিধান। ভারতের লিখিত সংবিধানের ধারণাটি সর্বপ্রথম মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে গ্রহণ করা হয়েছে।
ভারতের মূল সংবিধানের ৩৯৫ টি ধারা, ২৫ টি অধ্যায় এবং ৮টি তপশিল ছিল। কিন্তু বর্তমানে ভারতবর্ষের সংবিধানের একাধিক সংশোধনের ফলে ৪৪৮ টি ধারা, ২৫ টি অধ্যায় এবং ১২ টি তপশিলি অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।
ভারতীয় সংবিধানের কেন্দ্র এবং রাজ্যগুলির আইন বিভাগ, শাসন বিভাগ, বিচার বিভাগের গঠন ক্ষমতা ও কার্যাবলী সম্পর্কে সুস্পষ্ট আলোচনা করা হয়েছে। সংবিধানের নাগরিকদের মৌলিক অধিকার,কর্তব্য ও রাষ্ট্র পরিচালনা নির্দেশমূলক নীতি ইত্যাদি অত্যন্ত বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। যেগুলি ভারতীয় সংবিধানের বৃহত্তম দিককে বিশেষভাবে নির্দেশ করে থাকে।
2. প্রস্তাবনা
ভারতীয় সংবিধানের বৈশিষ্ট্য হল প্রস্তাবনা। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের অনুকরণে ভারতীয় সংবিধানে প্রস্তাবনা সংযোজিত হয়েছে। তবে প্রস্তাবনার ভাষার ক্ষেত্রে অস্ট্রেলিয়ার সংবিধানকে অনুকরণ করা হয়েছে।
সংবিধানের প্রস্তাবনাতে ভারতবর্ষকে সার্বভৌম, সমাজতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ ,গণতান্ত্রিক, সাধারণতন্ত্র রাষ্ট্র হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে।
3. সংবিধানের প্রধান
ভারতীয় সংবিধান হল দেশের সর্বোচ্চ ও মৌলিক আইন। ভারতের সংবিধান হলো যাবতীয় ক্ষমতার উৎস। সংবিধান বহির্ভূত কোনো বিষয় সংবিধান বিরোধী হিসেবে গণ্য হয়।
4. সংসদীয় শাসন ব্যবস্থা
ভারতীয় সংবিধানের বৈশিষ্ট্য হল সংসদীয় শাসন ব্যবস্থা। ভারতের সংবিধান প্রণেতাগন ব্রিটিশ শাসন ব্যবস্থা মডেলকে অনুসরণ করেছে। বৃটেনের প্রশাসনিক প্রধান হিসেবে রাজা বা রানী বিদ্যমান । সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি কারোও কাছে দয়াবান নয়। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রী পরিষদ পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ লোকসভার কাছে দয়াবান।
5. মৌলিক অধিকার
প্রত্যেকটা মানুষের ব্যক্তিত্বের সার্বিক বিকাশের জন্য ভারতীয় সংবিধানের তৃতীয় অধ্যায় 12 থেকে 35 নম্বর ধারার মধ্যে ছটি মৌলিক অধিকার উল্লেখিত হয়েছে। ভারতীয় সংবিধানে মৌলিক অধিকারের ধারণাটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট সংবিধান থেকে গৃহীত। বর্তমানে ভারতীয় সংবিধানের মৌলিক অধিকারের সংখ্যা ৬টি। এই মৌলিক অধিকারগুলি হল –
১) সাম্যের অধিকার
২) স্বাধীনতার অধিকার
৩) শোষনের বিরুদ্ধে অধিকার
৪) ধর্মীয় স্বাধীনতার অধিকার
৫) শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিষয়ক অধিকার
৬) সংবিধানিক প্রতিবিধানের অধিকার
6. ধর্মনিরপেক্ষতা
ভারতীয় সংবিধানে ভারতবর্ষকে ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। ভারতে কোনো নির্দিষ্ট রাষ্ট্রীয় ধর্ম নেই। তাই ভারতের নির্দিষ্ট কোনো ধর্মের প্রতি পক্ষপাতিত্য করে না। তাই ধর্মনিরপেক্ষতা ভারতীয় সংবিধানের বৈশিষ্ট্য গুলির মধ্যে অন্যতম।
ভারতবর্ষের ধর্মনিরপেক্ষতা আদর্শকে বাস্তবায়িত করার জন্য সংবিধানের ২৫ থেকে ২৮ নম্বর ধারায় মৌলিক অধিকার হিসেবে ধর্মীয় স্বাধীনতা অধিকারকে সংশোধিত করা হয়েছে।
7. রাষ্ট্র পরিচালনা নির্দেশমূলক নীতি সমূহ
আয়ারল্যান্ডের সংবিধানের অনুসরণে ভারতীয় সংবিধানের চতুর্থ অধ্যায় ৩৬ থেকে ৫১ নম্বর ধারায় রাষ্ট্র পরিচালনা নির্দেশমূলক নীতিগুলি আলোচনা করা হয়েছে। এটি ভারতীয় সংবিধানের বৈশিষ্ট্য গুলির মধ্যে অন্যতম দিক নির্দেশ করে থাকে।
এই নীতিগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল কর্মের অধিকার,বার্ধক্য, বেকার ও পীড়িত অবস্থার সরকারি সাহায্য লাভের অধিকার, আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষা ইত্যাদি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ।
উপসংহার
সর্বোপরি বলা যায়, ভারতীয় সংবিধান (Characteristics of Indian Constitution) সারা বিশ্বের যে কোন সংবিধানের থেকে বৃহৎ প্রকৃতির। এই সংবিধান রচনার ক্ষেত্রে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের সংবিধানের সাহায্য নেওয়া হয়েছে। ফলস্বরূপ সংবিধানের পরিধি বৃদ্ধি পেয়েছে। তাই ভারতীয় সংবিধান সমগ্র ভারতবর্ষের কাছে একটি গর্বের বিষয় হিসেবে পরিগণিত হয়।
তথ্যসূত্র (Sources)
- Allaby, R. G. (2016) “Evolution .“Encyclopedia of Evolutionary Biology”. Ed. Kliman, Richard M. Oxford: Academic Press,19–24.
- Boyd, Brian. (2017) “Archaeology and Human-Animal Relations: Thinking through Anthropocentrism.” Annual Review of Anthropology 46.1, 299–316. Print.
- Online Sources
প্রশ্ন – ভারতীয় সংবিধান কবে গৃহীত হয়
উত্তর – ১৯৪৯ সালের ২৬ শে নভেম্বর ভারতীয় সংবিধান গৃহীত হয়। ভারতীয় সংবিধান গৃহীত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন বিষয় কার্যকর হয়, যথা – নাগরিকতা সংক্রান্ত বিষয়, নির্বাচন ও কার্যনির্বাহী সংসদ প্রভৃতি।
প্রশ্ন – ভারতীয় সংবিধান কবে কার্যকরী হয়
উত্তর – ভারতীয় সংবিধান ১৯৫০ সালের ২৬ শে জানুয়ারি কার্যকরী হয়।
প্রশ্ন – ভারতীয় সংবিধানের ধারা কয়টি
উত্তর – ভারতের মূল সংবিধানের ৩৯৫ টি ধারা, ২৫ টি অধ্যায় এবং ৮টি তপশিল ছিল। কিন্তু বর্তমানে ভারতবর্ষের সংবিধানের একাধিক সংশোধনের ফলে ৪৪৮ টি ধারা, ২৫ টি অধ্যায় এবং ১২ টি তপশিলি অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।
প্রশ্ন – ভারত রাষ্ট্রের প্রধান কে?
উত্তর – ভারতের রাষ্ট্রপ্রধান হলেন রাষ্ট্রপতি। অর্থাৎ রাষ্ট্রপতিকে ভারতের রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে গণ্য করা হয়ে থাকে। ভারতের প্রথম 15 তম উপজাতি মহিলা রাষ্ট্রপতি হলেন দ্রৌপদী মুর্মু (২০২৩)
প্রশ্ন – ভারতীয় সংবিধান কে রচনা করেন
উত্তর – ভারতীয় সংবিধান রচনা করেন ডক্টর বি আর আম্বেদকর। অর্থাৎ আম্বেদকরের নেতৃত্বে ভারতীয় সংবিধান রচনা করা হয়ে থাকে।
আরোও পোস্ট পড়ুন
- গ্রন্থ সম্পাদনায় সম্পাদকের ভূমিকা বা দায়িত্ব বা কাজ | Role of Editor in Book Publishing
- একজন দক্ষ প্রুফ রিডারের গুণাবলী | Qualities of a Good Proofreader
- প্রুফ সংশোধনের নিয়মাবলী উদাহরণ সহযোগে আলোচনা | How to Proofread Professionally
- প্রুফ সংশোধনের প্রয়োজনীয়তা | Importance of Proofreading
- প্রুফ সংশোধন কাকে বলে | প্রুফ সংশোধন চিহ্ন ব্যবহার | Proofreading or Proof Reading
- রোমান সাম্রাজ্যের পতনের কারণ | 10 Reasons for the Fall of the Roman Empire
1 thought on “ভারতীয় সংবিধানের বৈশিষ্ট্য | Characteristics of Indian Constitution”